Breast Cancer Awareness
স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ স্তন ক্যান্সারের প্রধান ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে একজন মহিলা হওয়া এবং বয়স্ক হওয়া (বেশিরভাগ স্তন ক্যান্সার 55 বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে পাওয়া যায়)। ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন অনিয়ন্ত্রিত কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত/পারিবারিক ইতিহাস, জাতি, স্তনের ঘনত্ব এবং মাসিকের ইতিহাস। এছাড়াও, নির্দিষ্ট স্তন ক্যান্সারের জিনের পরিবর্তন (BRCA1 এবং BRCA2) স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও কিছু ঝুঁকির কারণ জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত, যার মধ্যে রয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের ব্যবহার, মেনোপজের পরে হরমোন থেরাপি, অতিরিক্ত সন্তান ধারণ করা, অ্যালকোহল পান করা, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূল হওয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা। স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর উপায় একটি সুস্থ জীবনযাপন করতে হবে।অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এড়াতে শারীরিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হতে হবে। খাদ্য গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। নিয়মিত স্তনের যত্ন নিতে হবে। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। প্রতি সপ্তাহে, কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা হাঁটতে হবে। অ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
উপসংহার: স্তন ক্যান্সার একটি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য উদ্বেগ যা প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ নারী এবং তাদের পরিবারকে প্রভাবিত করে। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা, সনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধের উপায় জানা থাকলে বেচে যাবে অনেক মা বোনের জীবন। এইজন্য সকল মা বোনদের স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন করা উচিত।
কেন স্তন ক্যান্সার সচেতনতা এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।বাংলাদেশেও বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি'র হিসেবে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মারা যান ৬৭৮৩ জন। নারী ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৯% স্তন ক্যান্সারে ভোগেন। বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে স্তন ক্যান্সার শীর্ষে রয়েছে।
স্তন ক্যান্সার কি?
স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার। চিকিৎসকদের মতে, যেকোন নারীই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। ত্বকের ক্যান্সার ছাড়া মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন মহিলার জীবনে তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার গড় ঝুঁকি প্রায় ১২%, বা ৮ জনের মধ্যে ১জন। একজন মহিলার স্তন ক্যান্সারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ২.৬%, বা ৩৮ জনের মধ্যে ১জন।
স্তন ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ ও উপসর্গ
প্রতিটি মহিলার জানা উচিত যে তার স্তনগুলি সাধারণত কেমন দেখায়, সে কেমন অনুভব করে এবং যাতে কোনো পরিবর্তন ঘটলে সে চিনতে পারে। এখন একজন মহিলার নিয়মিত ম্যামোগ্রাম এবং ক্লিনিকাল স্তন পরীক্ষা করা উচিত, কারণ এই পরীক্ষাগুলি দ্বারা উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করা যায়।স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যে
স্তনে বা আন্ডারআর্মে পিণ্ড (বগল)
স্তনের সমস্ত বা অংশবিশেষ ফুলে যাওয়া বা ঘন হওয়া
স্তনের ত্বকে ডিম্পলিং বা ত্বকের জ্বালা
স্ক্রমাগত স্তনে ব্যথা
স্তনের বোঁটা বা স্তনের ত্বকের লালভাব, আঁশ বা ঘন হয়ে যাওয়া
স্তনের স্রাব (স্তনের দুধ ছাড়া)
স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন
স্তন ক্যান্সারের পরীক্ষা নিরীক্ষা
সাধারণত তিনটি পরীক্ষার সাহায্যে স্তন ক্যান্সার সনাক্ত করা হয়। প্রত্যেকের কিছু নিজস্ব সুবিধা এবং ঝুঁকি রয়েছে। মহিলাদের উচিত পরীক্ষার নিরীক্ষার আগে সেরা বিকল্প হিসেবে তাদের ডাক্তারের সাথে কথা বলা
১. ম্যামোগ্রাম: এটি হল স্তনের একটি এক্স-রে পরীক্ষা যা স্তনের পরিবর্তনগুলি সনাক্ত এবং মূল্যায়ন করতে ব্যবহৃত হয়। এর সনাক্তকরণ ক্ষমতা টিউমারের আকার এবং স্তনের টিস্যুর ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। ত্রিমাত্রিক (3D) ম্যামোগ্রাফি হল এক ধরনের ডিজিটাল ম্যামোগ্রাফি যেখানে এক্স-রে মেশিনগুলি বিভিন্ন কোণ থেকে স্তনের পাতলা টুকরোগুলির ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং একটি ছবি পুনর্গঠনের জন্য কম্পিউটার সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
২. আল্ট্রাসাউন্ড: স্তনের আল্ট্রাসাউন্ড প্রায়ই ম্যামোগ্রাফির সাথে ব্যবহার করা হয় উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ মহিলাদের জন্য যারা এমআরআই করাতে পারেন না, এবং ঘন স্তনের টিস্যুযুক্ত মহিলাদের জন্য।
৩.এমআরআই: স্তন এমআরআই (চৌম্বকীয় অনুরণন ইমেজিং) উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ মহিলাদের স্ক্রীন করতে এবং ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসাউন্ডে পাওয়া সন্দেহজনক এলাকা সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।